নতুন কারিকুলাম নিয়ে অপপ্রচার

 ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণ শেষ না হতেই অবসরে প্রশিক্ষকরা। দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অষ্টম ও নবম শ্রেণির নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আগেই অবসরে যাচ্ছেন তাদের প্রশিক্ষকরা। এতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের বিষয়টি ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে। এসব শিক্ষকের প্রশিক্ষকরা যে প্রকল্পের অধীনে কাজ করছেন, এর মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে প্রকল্পটির ঋণের চুক্তিও শেষ হয়।

নতুন কারিকুলাম নিয়ে অপপ্রচার


এ প্রেক্ষাপটে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। খবরটি সঠিক নয়। সঠিক তথ্য এই, চলমান নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসেবে সবাই কর্মরত রয়েছেন এবং তারাই নতুন কারিকুলামের আলোকে দক্ষতার সঙ্গে শ্রেণিকক্ষেও পাঠদান করবেন। প্রতিবেদনে মূলত সিসি প্রকল্পে কর্মরত একাডেমিক সুপারভাইজার অর্থাৎ তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। সিসি প্রকল্পের একাডেমিক সুপারভাইজারদের সঙ্গে নতুন কারিকুলাম এবং শিক্ষক প্রশিক্ষকদের কোনো সম্পর্ক নেই! নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন যখন নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে তখন এ ধরনের খবর অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের কাছে ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে পারে। বরং প্রকল্পের জনবলের নামে মাধ্যমিক শিক্ষার প্রকৃত উন্নয়নকেই বারবার পিছিয়ে রাখা হচ্ছে!


বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখার সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহে কর্মরত সিনিয়র শিক্ষকদের (প্রথম শ্রেণির নন ক্যাডার) সেসিপ প্রকল্পের মেয়াদ শেষে দায়িত্ব দেওয়া হলে এ কার্যক্রম আরও সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে চলবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। কারণ এই শিক্ষকরা শ্রেণি পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ পরিচালনায়ও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। একই সঙ্গে নতুন কারিকুলামের সঙ্গে যেমন তারা শুরু থেকেই যুক্ত রয়েছেন, তেমন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নতুন কারিকুলামের শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে সাফল্য দেখিয়েছেন। এসব অভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষক এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মাস্টার ট্রেইনার শিক্ষক কর্মকর্তাদের একাডেমিক সুপারভিশনের দায়িত্ব দেওয়া হলে সিসি প্রকল্পের জনবল সংকটের বিষয়টি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। আমরা জানি, সরকার ইতোমধ্যে যেসব মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৩ সালে বাস্তবায়নকৃত নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভিন্ন মহল ইতোমধ্যে নানা ধোঁয়াশা তৈরির চেষ্টা করেছে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমডি) থেকে প্রকল্পের বিষয়ে বলা হয়, গত ৩ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৯৭.৫০ শতাংশ। এর মধ্যে প্রকল্পটি তিনবার সংশোধন করা হয়েছে এবং চারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর এডিবি থেকে দেওয়া ঋণচুক্তির মেয়াদও শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর। প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ালে বাড়তি ব্যয় হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এ মন্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত। যেখানে বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় রাজস্ব খাতের দক্ষ জনবল (শিক্ষক/কর্মকর্তা) রয়েছে, সেখানে প্রকল্পের জনবল রাখার আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কি না তা-ও বড় প্রশ্ন বটে।

লেখক: মোঃ ওমর ফারুক
সহকারী শিক্ষক (বাংলা)
সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা
ওসদস্য,
কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি
বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি (বাসমাশিস)।
মোবাইল নম্বর : ০১৭১৬ ৩৬৪ ১১০
ইমেইল : omurfaruknghs12@gmail.com

Post a Comment

0 Comments