প্রকাশ্যে কলেজ শিক্ষককে চড়থাপ্পড়, ছাত্রলীগের দাবি হালকা শাসন

প্রকাশ্যে কলেজ শিক্ষককে চড়থাপ্পড়, ছাত্রলীগের দাবি হালকা শাসন
 প্রতিবাদে মানববন্ধন করে কলেজটির শিক্ষকগণ


ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে জয়পুরহাটে এক কলেজ শিক্ষককে প্রকাশ্যে রাস্তায় কিল-ঘুষি চড়থাপ্পড় মেরেছে ছাত্রলীগের নেতারা। পরে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা সাংবাদিকদের কাছে হালকা শাসন করেছে বলে জানান। এ ঘটনায় কলেজ শিক্ষকরা তাৎক্ষণিক মানববন্ধন ও মারধরের শিকার শিক্ষক থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।

মারধরের শিকার জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল সরকারি সাঈদ আলতাফুনেচ্ছা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌস রনি (৪৩)। বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে ক্ষেতলাল কলেজ সড়কের মৎস্য খামারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদী আশিক রাজু ও যুগ্ম আহ্বায়ক জুল আরশ শুভসহ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে মারধর করেন। 

মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ আয়োজনে মাউশির জরুরি নির্দেশ

 

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌস রনি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দিয়েছেন এমন অভিযোগ তুলে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতারা তাকে মারধর করেন। জান্নাতুল ফেরদৌস রনি ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের নশিরপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ মন্ডলের ছেলে।

মারধরের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক ক্লাস বর্জন করে থানার সামনের সড়কে মানববন্ধন করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন কলেজটির শিক্ষকরা। পরে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদি আশিক রাজু ও যুগ্ম আহ্বায়ক জুল আরস শুভসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

প্রকাশ্যে কলেজ শিক্ষককে চড়থাপ্পড়, ছাত্রলীগের দাবি হালকা শাসন


প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জান্নাতুল ফেরদৌস সকালে কলেজে আসেন। উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদী আশিক রাজু ও যুগ্ম আহ্বায়ক জুল আরশ কলেজে গিয়ে প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌস রনিকে খোঁজাখুঁজি করে চলে আসেন। 

পরে জান্নাতুল ফেরদৌস রনি দুপুরের খাবারের জন্য বের হয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে কলেজ সড়কের মৎস্য খামারের কাছে পৌঁছালে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদী আশিক রাজু ও যুগ্ম আহ্বায়ক জুল আরশ শুভ দলবল নিয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস রনিকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এ সময় কলেজের অন্য শিক্ষকরা এগিয়ে এসে তাকে ছাত্রলীগের কবল থেকে উদ্ধার করেন। 

এ ঘটনা জানাজানির পর কলেজের সকল শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিকেল সাড়ে ৩টায় কলেজের শিক্ষকরা থানার সামনে মানববন্ধন করেন। ওই মানববন্ধন থেকে শিক্ষকরা অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

প্রভাষক জান্নাতুল ফেরদৌস রনি সাংবাদিকদের বলেন, দুপুরে আমি কলেজ থেকে বের হয়ে হেঁটে ক্ষেতলাল বাজারে খেতে যাচ্ছিলাম। কলেজ সড়কের সরকারি মৎস্য খামারের সামনে পৌঁছালে ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মেহেদী আশিক রাজু ও যুগ্ম আহ্বায়ক জুল আরশ শুভ আমার পথরোধ করে আমাকে বলে ‘তুই লোকজনদের ভোট দিতে বাধা দিয়েছিস। তোর খবর আছে’ বলেই তারা দুজন আমাকে বেধড়ক কিল-ঘুষি শুরু করে। এরপর আরও ১৫-২০ জন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এসে লাঠি দিয়ে আমাকে মাধরধর করে।

আমার চিৎকারে সহকর্মীরা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। চিকিৎসা শেষে বিকেলে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দিয়েছি।

অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ক্ষেতলাল উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জুল আরস শুভ বলেন, শিক্ষক রনিকে মারধর করা হয়নি। নির্বাচনের দিন একটি কেন্দ্রে ভোটার আসতে দেননি ওই শিক্ষক। এমন আচরণের কারণ জানার জন্য তাঁকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো উত্তর না দিয়ে উদ্ধত আচরণ করেন তিনি। তাঁর আচরণের কারণে ছেলেরা উত্তেজিত হয়ে হালকা শাসন করেছে।

ক্ষেতলাল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ওই শিক্ষক থানায় এজাহার দিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা পেয়ে সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

-The Daily Campus

Post a Comment

0 Comments