ফ্রিলান্সিং থেকে যদি এত আয় করা যায় তাহলে দেশে এত বেকার কেন?

"ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়!" কথাটা শুনতে খুব ভাল লাগে, তাই না? কিন্তু, তাহলে সবাই কেন লাখ লাখ টাকা রোজগার করতে পারে না? চলুন, বিষয়টির একটু গভীর থেকে ঘুরে আসি।

প্রথমত, আমাদের একটি সমস্যা আছে। তবে ঠিক সমস্যা বলব কিনা জানিনা, ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা খুব শর্টকাট রাস্তাতে বড় হতে চাই।


ফ্রিলান্সিং থেকে যদি এত আয় করা যায় তাহলে দেশে এত বেকার কেন?



দ্বিতীয়ত, আমরা কোন কিছু ভালোভাবে না বুঝে শুনেই সে বিষয়টা সফলতা নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি করি।

তৃতীয়ত, আমাদের ধৈর্য্য খুবই কম। আর আমরা কোন কিছুর প্রতি লেগে থাকার মত মানসিকতা নিয়ে কাজ করি না। আজ করব, তো কাল সফল হব— এটাই যেন আমাদের চিন্তাভাবনা।

চতুর্থত, আমরা কখনোই দক্ষ জনগোষ্ঠীতে রূপান্তর হতে চেষ্টা করি না। আমরা তথাকথিত জিপিএ ফাইভ ব্যাপারটাতেই খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। অবশ্য এখানে আমাদের চাইতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, আমাদের বাবা-মার ধ্যান-ধারণা, প্রতিবেশীদের অমুকের ছেলে ভালো করেছে তোমার ছেলে কেন করেনি? এই ব্যাপারটাই বেশি কাজ করে।

ফ্রী ইনকাম করার উপায়গুলো

পঞ্চমত, আমরা কখনোই কোনো দক্ষতা অর্জন করার জন্য খরচ করতে চাই না। আমরা শুধু খরচ করতে পছন্দ করি জিপিএ-5 পাওয়ার জন্য, সকাল থেকে সন্ধ্যা শুধু জিপিএ-5।

ষষ্ঠত, জীবনের যে বয়সে আমরা দক্ষতা অর্জন করব সে বয়সটা পার হয়ে যায় জিপিএ-5 পাওয়ার পেছনে। আর যখন পরিবার-পরিজনদের দায়িত্ব নেওয়ার সময় আসে তখন বুঝি দক্ষতা আমার এখনো তৈরি হয়নি। তাই তথাকথিত চাকরির পেছনে ছুটি আর হতাশ হই।

সপ্তমত, আমাদের সঠিক পথ দেখাবার মানুষের বড়ই অভাব। আমাদেরকে ছোটবেলা থেকেই মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় পড়াশোনা করো, জিপিএ-5 পাও, আর ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার অথবা বিসিএস ক্যাডার হও , তা না হলে জীবনটা তো ষোল আনাই মিছে!

অষ্টমত, ইংরেজির নাম শুনলে তো আমাদের গায়ে জ্বর চলে আসে। সতেরো -আঠারো বছর পড়ালেখা জীবন শেষ করেও দুটো ইংরেজি কথা বলা অথবা দুটো ইংরেজি শব্দ সুন্দরভাবে গুছিয়ে লেখা আমাদের দ্বারা হয় না। কিন্তু ইংরেজ একটি ভাষা ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধুমাত্র এক বছর কেউ যদি প্রাণপণ লেগে থাকে, তবে ইংরেজদের চেয়ে কোন অংশে খারাপ ইংরেজি ভাষায় সে কথা বলবে না।

আমি তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। হিসাববিজ্ঞানে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করার পরেও শুধুমাত্র নিজের চেষ্টায় খুব ভালো না হলেও মোটামুটি ইংরেজিতে কথা বলা বা যোগাযোগ চালিয়ে যাওয়ার মত দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছি। এ কারণে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মত কঠিন পেশায় নিজের একটি অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।

এগুলোই মোটামুটি কারণ, এছাড়া আরো অনেক কারণ রয়েছে যে কারণে আমরা ফ্রিল্যান্সিং পেশায় টাকা রোজগার করতে পারার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশে বেকারের অভাব নেই। আমরা কখনোই ফ্রিল্যান্সিং-এর মত কঠিন পেশায় দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের পাশে নিজেদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারি না। তখন ৯টা-৫টা চাকরি, ১৫-২০ হাজার টাকা বেতন, মধ্যবিত্ত জীবন যাপন, এটাই আমাদের জীবনের প্রতিদিনকার রুটিন হয়ে দাঁড়ায়।

Post a Comment

0 Comments