৩ জুলাই থেকে নতুন শিক্ষাক্রমে সারা দেশে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন শুরু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এই মূল্যায়ন কার্যক্রম চলবে। তবে এই মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে যেমন সমন্বয়হীনতা রয়েছে, পাশাপাশি এই মূল্যায়ন নিয়ে ধোঁয়াশায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরাও।
৯ জুন এই পরীক্ষার সিলেবাস প্রকাশ করা হয়। পরীক্ষার মাত্র ২৫ দিন আগে সিলেবাস প্রকাশ সম্পর্কে জানতে পারেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। অন্যদিকে ঈদ ও গ্রীষ্মের ছুটি ১৩ জুন থেকে শুরু হয়। অর্থাৎ ১২ জুন ছিল শেষ কর্মদিবস। এই দিনই বিকালে প্রকাশ করা হয় মূল্যায়ন পদ্ধতি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে সে সম্পর্কে।
আপনার প্রয়োজনীয় কোর্সটি ফ্রি ডাউনলোড করে নিন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২ জুলাই পর্যন্ত গ্রীষ্মের ছুটি থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর কোনো কর্মদিবস নেই, প্রস্তুতিরও সুযোগ নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেদিন খুলবে সেদিনই পরীক্ষা। ফলে পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিক্ষার্থীদেরও জানানোর কোনো সুযোগও ছিল না। এ কারণে বাধ্য হয়ে গ্রীষ্মের ছুটি ১ সপ্তাহ কমিয়ে আনতে হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, গ্রীষ্মের ছুটি জেনেও কেন ১২ জুন পরীক্ষা প্রক্রিয়ার প্রস্তুতির নোটিশ দেওয়া হলো এবং কেন ৩ জুলাই থেকে পরীক্ষা নেওয়ার রুটিন দেয়া হলো।
শিক্ষাবর্ষের ৬ মাসেও ঠিক হয়নি মূল্যায়ন কাঠামো
মূল্যায়ন নিয়ে বারবার পদ্ধতি ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষাবর্ষের সময়ের সঙ্গে মিল রেখে এগিয়ে নিতে পারছেন না নতুন শিক্ষাক্রম ও এর আলোকে মূল্যায়ন পদ্ধতি। শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এমন হচ্ছে। এনসিটিবির সঙ্গে অন্যান্য সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
মূল্যায়ন কৌশলের নির্দেশনা ছিল না
রুটিন প্রকাশ করা হয় ১৬ মে, যেখানে বলা হয় ৩ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। ১০ দিনে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কারিকুলাম অনুযায়ী, সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও শনিবারও পরীক্ষার আওয়তায় রাখা হয়েছে। তবে পরীক্ষা পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো ধারণাও দেওয়া হয়নি। চলতি বছর মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠদান চলছে।
পরীক্ষার মাত্র ২৫ দিন আগে সিলেবাস প্রকাশ
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চলতি বছরের ৫ জুন ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সিলেবাস তৈরি করে। এই সিলেবাস মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় ৯ জুন। পরীক্ষার মাত্র ২৫ দিন আগে এই সিলেবাস প্রকাশ করা হয়। যদিও বলা হয়েছে, দৈবচয়নের ভিত্তিতে সারা দেশের নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেণি কার্যক্রম সম্পন্ন করার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে পর্যন্ত শিখন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে সেই পর্যন্ত অভিজ্ঞতাগুলোকে বিবেচনা করে ষাণ্মসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সিলেবাসে কোন পৃষ্ঠা পর্যন্ত এই মূল্যায়ন হবে তা উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অনেক প্রতিষ্ঠানে ওই পৃষ্ঠা পর্যন্ত পাঠদান হয়নি। বিশেষ করে গ্রামের স্কুলের পাঠদানের অবস্থা ভালো নয়। শিক্ষকরা বলছেন, এমন সময়ে সিলেবাস দেওয়া উচিত ছিল যাতে সিলেবাস বাকি থাকলে তা শেষ করা যায়। শিক্ষকরা বলছেন, এই সিলেবাস বছরের শুরুতেই দেওয়া উচিত ছিল।
ছুটির মধ্যে ১৩ নির্দেশনা প্রকাশ, কমাতে হলো গ্রীষ্মকালীন ছুটি
সমন্বয়হীনতা দেখা গেছে মূল্যায়নের কৌশল ও প্রস্তুতি বিষয়ে নির্দেশনা নিয়ে। এ বিষয়ে ১৩টি নির্দেশনা যখন প্রকাশ করা হয়, তখন ঈদ ও গ্রীষ্মের ছুটি শুরু হয়েছিল। অন্যদিকে ৩ জুলাই এই ষাণ্মাসিক মূল্যায়ন শুরু। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের আগে কর্মদিবস না থাকায় ছুটি এক সপ্তাহ কমিয়ে আনতে হয়েছে। ওই ১৩টি নির্দেশনা বছরের শুরুতেই দেওয়া কথা। কিন্তু এনসিটিবি দিতে পারেনি।
ওই নির্দেশনায় বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন কার্যক্রম সর্বোচ্চ পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে শেষ করা ও মূল্যায়ন পরিচালনায় সীমিত পরিমাণে পরিচালনা ফি নেওয়াসহ নানা বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। মূল্যায়ন কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে একটি মধ্যবর্তী বিরতির নেওয়ার কথাও বলা হয়।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ৩ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পাদিত সব বিষয়ের শিখন অভিজ্ঞতার পারদর্শিতার নির্দেশকগুলো নৈপুণ্য অ্যাপে ইনপুট দিতে হবে। মূল্যায়ন কার্যক্রমে হাতে-কলমে কাজ ও কার্যক্রমভিত্তিক লিখিত অংশে দুই ধরনের কার্যক্রম আছে। হাতে-কলমে কাজের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও লিখিত অংশের জন্য প্রয়োজনীয় খাতা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করতে হবে। মূল্যায়ন কার্যক্রমের হাতেকলমে কাজের উপকরণের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় পোস্টার তৈরির জন্য সাদা বা রঙিন কাগজ, সাইন পেন, কাঁচি, আঠা বা গাম ইত্যাদি। লিখিত অংশে বলা হয়েছে, ১৬ পাতার খাতা, প্রয়োজনে অতিরিক্ত পাতা সরবরাহ করতে হবে।
জামিল হোসেন হোসেন নামে ঢাকার নামি প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক জানান, স্কুল থেকে দুদিন আগে আমাদের জানানো হয়েছে, পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার। পরীক্ষার মানবণ্টন এখনো পাইনি। কত সময় লিখিত পরীক্ষা বা কত সময় ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে সে সম্পর্কে এখনো স্পষ্ট ধারণা পাইনি। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নের ধরন কী হবে সে সম্পর্কেও আমাদের ধারণা নেই। শিক্ষার্থী শুধু ফোন করে এ বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চায়।
জাহিদ হোসেন নামে এক শিক্ষক বলেন, আমরা ঢাকায় থেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে ততটা ধারণা পাচ্ছি না বা পেলেও দেরিতে পাচ্ছি। গ্রামের স্কুল নিশ্চয় আরো পিছিয়ে থাকবে। গ্রামের স্কুলগুলো বিবেচনায় না এনে মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করলে তারা আরও পিছিয়ে পড়বে।
0 Comments