এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখতে গিয়ে বিচিত্র এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন পরীক্ষকেরা। তাঁরা দেখেছেন, যে প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে, খাতায় সেই প্রশ্নের উত্তর না লিখে অন্য কোনো প্রশ্ন ও তার উত্তর লিখে চলে এসেছে পরীক্ষার্থীদের অনেকেই। এই প্রবণতা দেখে বিস্মিত তাঁরা। তাঁদের ধারণা, অজানা প্রশ্নের ক্ষেত্রেই অনেকে এই কাজটা করেছেন। অর্থাৎ, সাদা পাতা না ছেড়ে অন্য কোনো জানা প্রশ্নের উত্তর লিখে দিয়ে চলে এসেছেন অনেকেই।
উত্তর কলকাতার একটি স্কুলের বাংলার পরীক্ষক বলেন, খাতা দেখতে গিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছি। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব নিয়ে রচনা লিখতে দেওয়া হয়েছিল। এক পরীক্ষার্থী তা না লিখে অন্য একটি প্রশ্ন ও সেটির উত্তর খাতায় লিখেছেন। যেমন, খাতায় এক জন লিখেছেন, সমাজসেবায় ছাত্রদের ভূমিকা’ নিয়ে আলোচনা করো। তার পরে তিনি ওই বিষয়ে রচনা লিখেছেন।
ওই পরীক্ষক জানাচ্ছেন, প্রশ্নের উত্তরে অবান্তর লেখা আগেও দেখা গিয়েছে। কিন্তু এ বারই প্রথম দেখলেন যে, অন্য কোনও জানা প্রশ্ন ও তার উত্তর লিখে দেওয়া হয়েছে। ওই পরীক্ষকের প্রশ্ন, ওই পরীক্ষার্থীকে কি কেউ বলেছে যে, জানা প্রশ্ন না এলে অন্য কোনো প্রশ্ন ও তার উত্তর লিখে আসতে? আর এক পরীক্ষক জানাচ্ছেন, প্রশ্ন এসেছিল, বাংলার ক্রীড়া-সংস্কৃতিতে নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর ভূমিকা। ওই পরীক্ষক বললেন, নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীকে বাংলার ফুটবলের অন্যতম জনকও বলা হয়। কিন্তু দেখা গেল, কয়েক জন পরীক্ষার্থী নগেন্দ্রপ্রসাদের ধারেকাছেও যাননি। এক জন লিখেছেন, ক্রিকেটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অবদান নিয়ে। আর এক জন লিখেছেন সাঁতারে মিহির সেনের অবদানের কথা। ওদের কি কেউ বুঝিয়েছে যে, কিছু একটা লিখে এলেই হবে?
পরীক্ষকেরা জানাচ্ছেন, প্রশ্নের উত্তর লিখতে না পেরে যে প্রশ্ন এসেছে, শুধু সেটাই খাতায় টুকে দিয়েছেন অনেকে। এই প্রবণতা বেশি দেখা গিয়েছে ইংরেজির উত্তরপত্রে। অনেকেই আছেন, যারা শুধু ছোট প্রশ্ন, অর্থাৎ এমসিকিউ (মাল্টিপল চয়েস কোয়েশ্চেন) এবং এসএকিউ (শর্ট আনসার টাইপ কোয়েশ্চেন)-এর উত্তর দিতে পেরেছেন। বাকি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে শুধু প্রশ্নগুলো খাতায় টুকে দিয়েছেন।
সুমনা সেনগুপ্ত নামে এক বাংলার শিক্ষিকা বলেন, এখন প্রায় প্রতিটি বিষয়েই শুধু এমসিকিউ এবং এসএকিউ-এর উত্তর দিলেই পাস নম্বর তুলে ফেলা যায়। তাই ওই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরে বাকি প্রশ্নের উত্তর লেখার চেষ্টাই করেননি অনেকে। যারা লিখেছেন, তারা অনেকেই আবার বিস্তর অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও উত্তর লিখে খাতা ভরিয়েছেন।
‘কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস’-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, হয়তো পরীক্ষার্থীরা যেটা টুকলি করে আনছে, সেটাই লিখে দিচ্ছে খাতায়। এমন অবান্তর লেখা লিখলে যে কোনও নম্বরই মেলে না, তা আমরা পড়ুয়াদের অনেক বার বুঝিয়েছি।
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের এক কর্তা বলেন, এ বারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের লেখার প্রবণতা কেমন ছিল, তা আমরা পরীক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানব। তবে, এই শিক্ষাবর্ষ থেকেই সিমেস্টার পদ্ধতিতে একাদশ ও দ্বাদশে পরীক্ষা হবে। পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন হয়েছে। তাই উত্তর লেখার ধরনও পাল্টাচ্ছে। এই ধরনের উত্তর লেখার প্রবণতা কমবে বলেই আমাদের মনে হয়।
0 Comments