আগামীতে রমজান মাসজুড়ে ছুটি পাবে না প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজনে রমজানে ছুটি আরও কমিয়ে দিয়ে শিক্ষাপঞ্জিকা তৈরি করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘বছরে ১৮৫ দিন প্রয়োজন। সে কারণে ছুটি আর বাড়ানোর সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে শিখনঘণ্টা ঠিক রাখতে হবে, আর সে কারণেই আমরা আগামী বছরের শুরুতেই হিসাব-নিকাশ করে শিক্ষাপঞ্জিকা প্রকাশ করবো।’
সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সুষ্ঠু বদলি নীতিমালা চাই
আগামীতে পুরো রমজান মাসজুড়ে ছুটি না দিলে ধর্মীয় কারণে শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেবে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক নেহাল বলেন, ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরানে রমজানে ছুটি মাত্র ২ দিন, পাকিস্তানে ৩ দিন। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে পুরো রজমান মাসজুড়ে ছুটি নেই। সেসব দেশে রোজার মধ্যে বিদ্যালয় চলছে। সেসব দেশে তো সমস্যা হচ্ছে না। আমাদের কোনও হবে। তাছাড়া বাংলাদেশে এক সময় শবে-কদর থেকে ঈদ পর্যন্ত ছুটি থাকতো। তখন তো সমস্যা হয়নি, কেউ আপত্তিও করেনি। তাহলে এখন কেন হবে?’
জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকে এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও রমজান মাসে বিদ্যালয় খোলা থাকতো। ইসলামিক রাষ্ট্রগুলোয় রমজান মাসে বিদ্যালয় খোলা থাকে। তাদের কোনও সমস্যা হয় না। কারণ তারা শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করেই রমজানে বিদ্যালয় খোলা রাখে। তাহলে বাংলাদেশে কেন সমস্যা হবে? শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন বিবেচনা করে যেকোনও সিদ্ধান্ত সরকার নেবে, এটাই স্বাভাবিক।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার দাখিল স্তর পর্যন্ত শিখন ঘণ্টা ঠিক রাখতে হলে আগামী রমজান মাসে ছুটি বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। আর সে কারণে ২০২৫ সালের শুরুতেই শিক্ষাপঞ্জিকা প্রকাশের আগে ঠিক করে নিতে হবে সারা বছরের হিসাব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুধু রাজধানী শহরের বিবেচনায় শিখনঘণ্টা ঠিক থাকবে আর প্রত্যন্ত অঞ্চল বা দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হবে, তা হবে না। সে কারণে ১৮৫ দিনের বেশি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার হিসেব ধরে শিক্ষাপঞ্জিকা করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। আগামী রমজান মাসে প্রয়োজনে ছুটি কমানো হতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগের কারণে ছুটি দিলে সেখানে শিখনঘণ্টা কমে যায়, বেশি শীত পড়লে ছুটি দিলে শিখনঘণ্টা কমে যায়— এসব কারণে শিখন ঘণ্টা হিসাব করে ১৮৫ দিনের বেশি শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষাপঞ্জিকা করা হতে পারে। তাছাড়া রাজধানীর বাইরের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্য করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর এবং এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে তথ্য সংগ্রহসহ নানা কারণে আগের চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হবে। তাছাড়া সাপ্তাহিক ছুটি একদিন বাড়ানো হয়েছে। শুধু সাপ্তাহিক ছুটির ১০৪ দিন। ফলে শিখনঘণ্টা ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ১৮৫ দিন বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই। শিখনঘণ্টা ঠিক রাখতে বাড়তি হিসেবে ধরে শিক্ষাপঞ্জিকা করার সময় এসেছে।
প্রসঙ্গত, এ বছর মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ও অন্যান্য ছুটিসহ রমজান মাসের প্রথম ১৫ দিন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ দিন স্কুল খোলা রাখাতে শিক্ষাপঞ্জিকা সংশোধন করা হয়। আর এতে করে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রমজানে স্কুল খোলা রাখার নির্দেশনার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন। গত ১০ মার্চ রমজান মাসজুড়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলা রাখা সংক্রান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। ফলে রমজানে বিদ্যালয় খোলা রাখতে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে।
0 Comments