অর্ধশত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছে ইসি


অর্ধশত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছে ইসি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে সরাসরি প্রচারে অংশ নিয়েছেন বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষক ও চিকিৎসক। সরকারি চাকরি করেও এ ধরনের প্রচারে অংশ নেওয়া তাদের চাকরিবিধি, নির্বাচনী আচরণবিধি ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) লঙ্ঘন। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। কিছু অভিযোগ লিখিতভাবে করে সংক্ষুব্ধ পক্ষ। আবার কিছু অভিযোগ বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে যাচাই করে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম জি কিবরিয়াসহ অন্তত অর্ধশত সরকারি শিক্ষক ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। ইসি এসব সুপারিশের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল বুধবার ইসির আইন শাখা সূত্রে জানা গেছে, এসব সুপারিশ অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীল বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

ধারাবাহিকতা রক্ষা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করব: নতুন শিক্ষামন্ত্রী

 যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা-১৮ আসনের নওয়াব হাবিবুল্লাহ মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহিনুর মিয়া, উত্তরা গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি নুরুল আমীন এবং ঢাকা তুরাগের নিশাতনগরের কামারপাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ খুরশিদ জাহান। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন তারা।

গাজীপুর-৩ আসনে শ্রীপুরের সহকারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শওকত আলী মৃধার বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা আফরোজ চাকরিবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি না, তা যাচাই করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও-২ আসনের বালিয়াডাঙ্গী সরকারি শহীদ আকবর আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয়ের সহকারী গ্রন্থাগারিক মো. মোমিনুল ইসলাম ভাষানী নির্বাচনী আচরণবিধি ও সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। নাটোর-৪ আসনের বানপাড়া শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বাবলুর বিরুদ্ধে আরপিওর বিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সেন্ট্রাল করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্যানেলভুক্ত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, গোপালদী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্যানেলভুক্ত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. সাদেকুর রহমান, জাঙ্গালিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্যানেলভুক্ত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাহেদুল হক, উজানগোবিন্দী বিনাইরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্যানেলভুক্ত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. আনোয়ার-উজ-জামান খান, জাহানারা বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্যানেলভুক্ত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফজলুল হক, ৮৩নং মুকুন্দী গাজীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও প্যানেলভুক্ত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী ও প্যানেলভুক্ত সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা লুৎফুন্নাহার বেগম ও আড়াইহাজারের রোকনউদ্দিন মোল্লা গার্লস ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মইনুল হোসেন। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। নির্বাচন কর্মকর্তা আইন ১৯৯১-এর ৫ ধারার লঙ্ঘন করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে চৌহালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আরিফ সরকারের বিরুদ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ৭৩ ও ৮৪ (ক) এর বিধান লঙ্ঘন করায় তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। যশোর-৫ আসনে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে মক্তেশ্বরী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. মামুন-অর-রশিদ ও ঢাকুরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ তাপস কুমার কুণ্ডুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

আচারণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে কুমিল্লা-২ আসনে সেখানকার সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ৭৭(১)(ঙ) অনুচ্ছেদের লঙ্ঘনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। বরিশাল সদরে কড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নাজমিন আক্তার আচরণবিধি ও আরপিও লঙ্ঘনের দায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

কুমিল্লা-১১ আসনে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম জি কিবরিয়ার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারের একজন ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হয়েও নির্বাচনী সমাবেশে অংশগ্রহণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তার এই কর্মকাণ্ড সরকারি চাকরি সংক্রান্ত আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

পাবনা-৩ আসনে মাদারবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন, সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. হাসানুজ্জামান স্বপন, খানমরিচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুস সোবাহান, চকদিগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম, চণ্ডিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান, সুলতানপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম, পুকুরপাড় আইডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জিয়াউর রহমান, একই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রওশন আলী, মণ্ডতোষ ইউনিয়ন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ফারুক আহম্মেদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাবনার চাটমোহরে এক নম্বর হাণ্ডিয়াল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধেও আরপিও, নির্বাচনী আচারণবিধি এবং চাকরিবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও-২ আসনের হরিপুর সরকারি মোসলেম উদ্দিন কলেজের প্রভাষক আজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। নেত্রকোনা-১ আসনের কমলাকান্দার নাগডরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহান শাহর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া-২ আসনের শিবগঞ্জের চৌধুরী আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আমিনুল ইসলাম হেলালের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচারণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

-শিক্ষাবার্তা ডট কম

Post a Comment

0 Comments